ছবি :- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পাঠ্যপুস্তক |
লেখক-:মতি নন্দী
লেখকের পরিচিত :- মতি নন্দী (১০ জুলাই ১৯৩১ - ৩ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন ভারতের কলকাতার একজন বাঙালি লেখক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মতি নন্দী ছিলেন মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক এবং উপন্যাসিক ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি আনন্দ পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস 'কোনি'। লেখকের সম্বন্ধে আরো পড়ুন ।
রাগে চিৎকার করে উঠল ক্ষিতীশ , “ পারতেই হবে, পারতেই হবে । কোনাে কথা শুনব না । ”
পায়ের কাছে পড়ে থাকা ঢিলটা তুলে সে কোনির দিকে ছুঁড়ে মারল ।
“ পায়ে পড়ি ক্ষিদ্দা , আর আমি পারছি না । ”
“ মাথা ফাটিয়ে দোব তাের .. মরে যা তুই , মরে যা, মরে যা । " ক্ষিতীশ ঢিল খুঁজে পেল না । এধার ওধার তাকিয়ে মালির ঘরের গায়ে দাঁড় করানাে সরু বাঁশের লগাটাকে দেখতে পেল । ”
“ ক্ষিদ্দা , আমি আর পারব না । ”
ক্ষিতীশ রেলিং টপকে ছুটে গিয়ে লগাটা আনল । কোনি পাড়ের কাছে এগিয়ে এসেছে । ক্ষিতীশ দু'হাতে লগাটা তুলে জলে আঘাত করল । কোনির মুখের হাত তিনেক সামনে সেটা পড়ল । আবার সে লগাটা দু’হাত উঁচু করে জলে আঘাত করল ।
“ মাথা ভেঙে দেবাে । জল থেকে উঠবি তাে মরে যাবি । এখনাে দুশাে মিটার বাকি । ”
কোনি জল থেকে ওঠার জন্য পশ্চিমের স্টার্টিং প্ল্যাটফর্মের পিছন দিকে এগােতেই ক্ষিতীশ লগা তুলে পাড় ধরে ছুটল । কোনি থমকে গিয়ে প্ল্যাটফর্মের কিনার ধরে উঁকি দিতে লাগল । ক্ষিতীশ প্ল্যাটফর্মে উঠতে পারছে না , কেননা পাড় থেকে সেটা অন্তত বারাে হাত দূরে এবং মাঝে কোনাে সেতু নেই ।
“ ক্ষিদ্দা ক্ষিদ্দা , আমায় এবেলা ছেড়ে দাও । ওবেলা আমি পুষিয়ে দোব । ” কোনি ফোঁপাচ্ছে ।
“ কোনাে কথা আমি শুনতে চাই না । আমার রুটিন অনুযায়ী কাজ চাই । যতক্ষণ না কাজ পাচ্ছি আজ তােকে উঠতে দোব না । ”
প্ল্যাটফর্ম ধরা দু - হাতের মধ্যে মুখটা গুঁজে কোনি কঁদছে । ক্ষিতীশ পাথরের মতাে মুখ করে দাঁড়িয়ে। সকাল ন'টা বেজে গেছে । কমলদিঘির জলে আর কেউ নেই এখন । বেঞ্চগুলােয় অনেকেই বসে , কমলদিঘির ভিতরের পথ দিয়ে পথিকের আনাগােনা । তাদের অনেকে কৌতূহলে তাকাচ্ছে ক্ষিতীশের দিকে । কেউ কেউ দাঁড়িয়েও পড়ছে ।
কোনি সাঁতরাচ্ছে । পশ্চিম থেকে পুবের প্ল্যাটফর্মের দিকে । ক্ষিতীশও লগা হাতে পাড় ধরে পুবদিকে হাঁটছে । বিশ্বাস নেই , ওপারে পেীছেই কোনি জল থেকে উঠে পড়তে পারে ।
ওর ক্লান্ত হাত দুটো যেন কেউ জল থেকে টেনে তুলে আবার নামিয়ে রাখছে । মুখ ফিরিয়ে হাঁ করে বাতাস গিলছে । তখন চোখ দুটো দেখাচ্ছে যেন ঘুমে আচ্ছন্ন । গলায় ঝােলান স্টপওয়াচটা মুঠোয় ধরে ক্ষিতীশ বিড়বিড় করে আপন মনে বকে যাচ্ছে ।
জানি রে জানি কষ্ট হচ্ছে , হাত - পা খুলে খুলে আসছে , কলজে ফেটে যাচ্ছে । যাক যাক , তুই যন্ত্রণা ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যা । তুই জানিস ক্ষিদে যখন থাবা মারে , ছিড়ে ছিড়ে খায় , তখন কেমন লাগে । তুই পারবি বুঝতে যন্ত্রণা কী জিনিস । ফাইট কোনি ফাইট ...
মার খেয়ে ইস্পাত হয়ে উঠতে হবে । যন্ত্রণাকে বােঝ , ওটাকে কাজে লাগাতে শেখ , ওটাকে হারিয়ে দে । ... কাম অন কোনি , জোর লাগা , আরাে জোরে –
... ট্রেনিং করে করে নিজেকে বাড়াতে হবে কোনি । যন্ত্রণাকে তুই বল , ' দেখে নেব আমাকে কাদাতে পারিস কিনা , আমাকে ভয় দেখাতে পারিস কিনা ’, বলে যা কোনি , ‘ ক্ষিদ্দা তােমাকে খুন করব । তুমি শয়তান , ছিড়ে খাব তােমাকে । কমলদিঘিকে টগবগ করে ফুটিয়ে তােল তাের রাগে ।
... মানুষের ক্ষমতার সীমা নেই রে , ওরা পাগলা বলছে , বলুক । মুর্খ , মুর্খের দল সব । ঘণ্টাখানেক আরামে হাত - পা ছুঁড়িয়ে ওরা চ্যাম্পিয়ন বানাবার স্বপ্ন দেখে । ... ট্রেনিং ট্রেনিং –
আরাে পঞশ মিটার এখনাে যেতে হবে , শরীরটাকে যন্ত্রণায় ঘষে ঘষে শানিয়ে তােল । দেখবি কী অবাক তােকে করে দেবে ওই শরীর , যা অসম্ভব ভাবছিস তাকে সম্ভব করে দেবে । সােনার মেডেল - ফেডেল কিছু নয় রে , ওগুলাে এক একটি চাকতি মাত্র । ওগুলাের মধ্যে যে কথাগুলো ঢুকে আছে সেটাই আসল – মানুষ পারে , সব পারে ।
কোনি সাঁতার শেষ করে দু - হাতে প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁপাচ্ছে মাথা নীচু করে । একবার সে মাথা ঘুরিয়ে ক্ষিতীশের দিকে তাকাল । দু - চোখে ঘৃণা আর আক্রোশ । ক্ষিতীশ সেটা লক্ষ করল । লগাটা যথাস্থানে রেখে সে ক্লাবে ঢুকে একটা মােটা খাতা খুলে বসল । এটা কোনির লগ - বুক । প্রতি বেলার ট্রেনিং - এ কাজের ও সময়ের হিসাব ছাড়াও খাওয়ার , ওজনের , নাড়ির স্পন্দনের , রক্তের হেমােগ্লোবিন স্তর পরীক্ষার , আয়রন ও ভিটামিন ট্যাবলেটের তালিকাও এতে লেখা আছে ।
লগ - বুকে লিখতে লিখতে ক্ষিতীশ দেখল কোনি ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে গেল ক্লাব থেকে । প্রতিদিন বেরােবার আগে একবার ‘ যাচ্ছি’বলে যায় । আজ বলল না । ক্লাব থেকে কোনি যায় ক্ষিতীশের বাড়ি। সেখানেই ওর খাওয়া । ঠিক দশটায় তাকে প্রজাপতি ' - র রােলার শাটারের তালা খুলতে হয়। দোকান ঝাঁট দিয়ে , কাউন্টার মুছে , কুঁজোয় জল তুলে , তাকে ফাইফরমাশ খাটতে হয় । দুপুরে আবার আসে ভাত খেতে । তখন ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে পনেরাে মিনিট ব্যায়াম করে অ্যাপােলােয় যেতে হয় । সাঁতার থেকে আবার প্রজাপতিতে । দোকান বন্ধ করে সে লীলাবতীর সঙ্গে ফেরে । রাত্রে খেয়ে ফিরে যায় বস্তিতে মা ও ভাইদের কাছে। কোনি মাইনে পায় চল্লিশ টাকা ।
আজ কোনির দেরি হয়ে গেছে । ক্ষিতীশের বাড়ি না গিয়ে , সে প্রায়ে ছুটতে ছুটতে প্রজাপতিতে এল। লীলাবতী নিজেই দোকান খুলেছে । পাশের ফোটোগ্রাফি দোকানের ছেলেটি ভারী শাটারটা তুলে দিয়ে গেছে । লীলাবতী ওকে দেখেই রাস্তার দিকে আঙুল তুলে বলল , “ বেরিয়ে যাও । তোমায় তার দরকার নেই । ”
ফ্যাকাসে হয়ে গেল কোনির মুখ । মুখ নামিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকল । এই সময় খদ্দের আসায় লীলাবতী আর কিছু বলল না । কোনি একে একে তার কাজগুলাে করে গেল । ক্লান্তিতে এবং খিদেয় তখন সে ঝাপসা দেখছে , পা টলছে । তার খুব ঘুমােতে ইচ্ছে করছে কিন্তু দোকানে বসার মতাে জায়গাও তার জন্য নেই । একবার সে ভয়ে ভয়ে লীলাবতীকে বলল , “ বউদি , একটু বাড়ি যাব ? ”
বিরাট একটা মােটা খাতার উপর ঝুঁকে ফ্রকের মাপ লিখতে লিখতে লীলাবতী কড়া স্বরে বলল , “ না ” ।
কোনি সরে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকল । কাজটা থেকে বরখাস্ত হলে চল্লিশটা টাকা থেকে তাদের সংসার বশ্চিত হবে ।
ওদিকে ক্ষিতীশ বড়াে একটা থলি হাতে অ্যাপােলাে থেকে বেরিয়ে তখন একটার পর একটা দর্জির দোকান ঘুরছে কাপড়ের ছাঁট কেনার জন্য । তিনটে লন্ড্রির সঙ্গে তার বন্দোবস্ত হয়েছে । মার্ক দেওয়া নম্বর টুকরাে কাপড়ে লিখে জামাকাপড়ে বেঁধে কাঁচতে পাঠাবার জন্য লন্ডিগুলাের দরকার হয় এই ছাঁট । ছাঁট থেকে সমান মাপে কাপড় টুকরাে করে কেটে ক্ষিতীশকে বিক্রি করতে হয় । ওরা দৈনিক প্রায় তিন কিলাে কেনে । ক্ষিতীশ টাকা ছয় - সাত লাভ করে ।
দুপুর প্রায় একটা নাগাদ ক্ষিতীশ ছাঁট ভর্তি থলি নিয়ে কোনিদের ঘরের দরজায় হাজির হলাে । কোনির মা বেরিয়ে আসতেই
সে ঝাজিয়ে উঠল , “ কাল রাতে কোনি কখন ঘুমিয়েছিল ? ”
“ কেন , রােজ যেমন সময়ে ঘুমােয় । ” জড়ােসড়াে হয়ে কোনির মা বলল ।
“ ঠিক বলছ ? ” ক্ষিতীশ তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল । “ আজ এতাে তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ল কেন তাহলে ? দ্যাখাে মেয়ে , আমার কাছে কিছু লুকোলে কিন্তু ঠিক ধরা পড়ে যাবে । ঠিক করে বলাে , কখন কোনি ঘুমিয়েছে ? ”
“ না বাবা , আপনার কাছে মিছে বলব না । কাল রাতে কোনি যাত্রা শুনতে গেছল । রাত একটা নাগাদ ফিরে শুয়েছে । ”
“ হুঁ । ” থলিটা এগিয়ে দিয়ে ক্ষিতীশ বলল , “ এগুলাে কেটে রেখাে আজই , কাল সকালে কোনির হাত দিয়ে ক্লাবে পাঠিও । ”
পাঁচ টাকা কোনির মার হাতে দিয়ে , ফেরার আগে ক্ষিতীশ বিষন্ন স্বরে বলল , “ ছােটো মেয়ে , ওর তাে সখ হবেই । কিন্তু ওর ভালাের জন্যই তােমাকে কড়া হতে হবে । যেকোনাে খেলা সাধনার জিনিস । সিদ্ধিলাভ করতে হলে সন্ন্যাসীর মতােই জীবনযাপন করতে হবে । বহু ছােটোখাটো ব্যাপার আছে সাধনার পক্ষে যা ক্ষতিকর । যাত্রা নিশ্চয় দেখবে , কিন্তু এখন এই ট্রেনিংয়ের সময় বিশ্রাম নষ্ট করে নয় । এগুলাে তােমায় বুঝতে হবে । ”
বাড়ি ফিরে ক্ষিতীশ দেখল লীলাবতী অপেক্ষা করছে । তখুনি সে খেতে বসে গেল । খেতে খেতে খুবই সাধারণভাবে জিজ্ঞাসা করল , “ কোনি খেয়েছে ? ”
লীলাবতী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল , “ ওকে দিয়ে আমার কোনাে কাজ হবে না , ঝিমােয় শুধু । বসতে দিই না , দাঁড়িয়েই আজ ঘুমােচ্ছিল । ”
“ আজ ওকে খুব খাটিয়েছি । ”
“ তাতে আমার কী লাভ । পাঁচ হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়ে অন্যদিক থেকে সেটা নিয়ে নিচ্ছ । ”
“ ওর খাওয়ার জন্য তাে মাসে পঞ্চাশ টাকা। দিচ্ছি । ”
“ রােজ দুধ ডিম মধু , মাসে পঞ্চাশ টাকায় কি হয় । ”
ক্ষিতীশ তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে উঠে পড়ল । ঘরে এসে দেখে কোনি মেঝেয় অকাতরে ঘুমােচ্ছ । বালিশের বদলে দুটি হাত জড়াে করে মাথার নীচে রাখা । ক্ষিতীশ ওর পাশে বসে আলতাে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল । একটু পরেই কোনি নড়ে উঠে আরাে গুটিশুটি হয়ে সরে এল ক্ষিতীশের দিকে । বিড়বিড় করে কী যেন বলল । ক্ষিতীশ ঝুঁকে পড়ল শােনার জন্য ।
“ দাদা ? ”
“ হ্যাঁ । ”
একটা পাতলা হাসি কোনির মুখে চারিয়ে গেল । ‘ আমায় কুমির দেখাবে বলেছিলে । ”
“ দেখাব , চিড়িয়াখানায় তােকে নিয়ে যাব । ” ফিসফিস করে ক্ষিতীশ বলল । “ আরাে অনেক জায়গায় আমরা যার । – বেলুড়মঠ , ব্যান্ডেল চার্চ, ডায়মন্ড হারবার , জাদুঘর , অনেক অনেক জায়গায় । তারপর তুই যাবি দিল্লি , মুম্বাই , মাদ্রাজ ; তারপর যাবি আরাে দূরে টোকিও , লন্ডন, বার্লিন , মস্কো , নিউইয়র্ক । ”
ঘুমের মধ্যেই কোনির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ।
“ ক্ষিন্দা আমাকে কষ্ট দেয় দাদা । আমি ঠিক মেডেল এনে দেব তােমায় । ”
কোনিমুখে হাসি নিয়ে ঘুমের মধ্যে ডুবে গেল । ক্ষিতীশ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল , “ তােকে আরাে কষ্ট দেবাে রে , আরাে দেবাে । ”
রবিবার প্রজাপতি বন্ধ থাকে । সেদিন কোনির ট্রেনিংয়েও ছুটি । ক্ষিতীশের কাধে ঝুলছে থলি । তাতে আছে , কাগজের মােড়কে রুটি , আলু ছেঁচকি , গুড় , সিম্বডিম আর কলা ।
ওরা দুজন বাড়ি থেকে দশটায় বেরিয়েছে । চিড়িয়াখানায় ঘণ্টা তিনেক ঘুরে পুকুরধারে ঘাসে বসেছে । ক্ষিতীশ খাবারের মােড়ক দুটো বার করে বলল , “ জল খাওয়াটাই মুশকিল হবে । ওয়াটার বটলটা আনলে হতাে । ”
ওদের থেকে কিছু দূরে স্কুল ইউনিফর্ম পরা জনা তিরিশ মেয়ে হইচই করে হাজিরহালাে । সঙ্গে চারজন টিচার । দুজন দারোয়ান খাবারের ঝুড়ি বয়ে আনল । ওঁরা গােল হয়ে খেতে বসেছে । কোনি কৌতুহলভরে মাঝে মাঝে ওদের দিকে তাকাচ্ছে । আর রুটি চিবােচ্ছে ।
“ ক্ষিদ্দা , ওদের কাছে জল আছে । চাইব ? "
“ কী করে বুঝলি ? ”
“ ওই তাে বড়াে ড্রামটা থেকে জল দিচ্ছে । ”
“ দ্যাখ তাহলে । "
কোনি এগিয়ে গেল ড্রামের কাছে দাঁড়ানাে টিচারের দিকে । ক্ষিতীশ দেখল , কোনি তাকে কিছু বলতেই তিনি কোনিকে আপাদমস্তক দেখে মুখ ফিরিয়ে কী একটা জবাব দিলেন । তাইতে কোনি অপ্রতিভ হয়ে ফিরে এল ।
“ দিল না তাে । "
কোনির মুখটা থমথমে । শুধু বলল , “ বড়ােলােকদের মেয়েদের স্কুল । ”
“ তাই দিল না বুঝি ! ” ক্ষিতীশ কৌতুকের সুরে বলল ।
“ বড়ােলােকরা গরিবদের ঘেন্না করে । ”
ক্ষিতীশ এবার একটু অবাক হলাে । এইসব ধারণা এইটুকু কোনির মাথায় ঢুকল কী করে !
“ তােকে কে বলল , বড়ােলােকরা গরিবদের ঘেন্না করে ? ”
“ আমি জানি । দাদা আমায় বলেছিল , টাকা থাকলেই সবাই খাতির করে । ”
“ চল , জল খেয়ে আসি কল থেকে । ”
ওরা দু - চার পা এগিয়েছে , তখনই একটি মেয়ে “ শুনুন , শুনুন ” বলতে বলতে ছুটে এল । হাতে জলভরা প্লাস্টিকের দুটি গ্রাস ।
ওরা ঘুরে দাঁড়াল । এবং দুজনেই চিনতে পারল জলের গ্লাস হাতে মেয়েটি হিয়া মিত্র ।
" আপনারা জল চেয়েছিলেন না ? আমাদের মিস নন্দী বড় কড়া মেজাজের । ওর ব্যবহারের জন্য মাপ চাইছি । ”
হিয়া জলভরা একটা গ্লাস এগিয়ে ধরল কোনির সামনে । কোনি তখন অদ্ভুত আচরণ করে বসল । ধাঁ করে সে গ্লাসে আঘাত করল হাত দিয়ে । গ্লাসটা হিয়ার হাত থেকে ছিটকে ঘাসে পড়ল । হতভম্ভ শুধু হিয়াই নয় , ক্ষিতীশও ।
“ চাই না তােমাদের জল । আমাদের কলের জলই ভালাে । ”
কোনি হন হন করে একাই এগিয়ে গেল । ক্ষিতীশ অপ্রতিভ হয়ে বলল , “ আমি মাপ চাইছি এবার তােমার কাছে । ”
হিয়া ব্যথিত মুখে বলল , “ এই গ্লসের জলটা তাহলে আপনি খান । ”
“ নিশ্চয় নিশ্চয় । ”
কোনিকে দারুণ বকবে ভেবেছিল ক্ষিতীশ । কিন্তু সে কিছুই বলেনি । হিয়াই যে কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী এটা ক্ষিতীশ বুঝে গেছে । বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবে চারদিন সে গেছে নিছকই পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করার ভান করে । হিয়ার ট্রেনিং সে দেখেছে । শুধু তাই নয় , পকেটে হাত ঢুকিয়ে লুকিয়ে স্টপওয়াচে হিয়ার পুরাে দমে সাঁতারের সময় নিয়েছে । ক্ষিতীশের মনে হয়েছে , হিয়ার প্রতি কোনির হিংস্র আক্রোশটা ভোতা করে দেওয়া ঠিক হবে না । এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক । এটাই ওকে উত্তেজিত করে বােমার মতাে ফাটিয়ে দেবে আসল সময়ে ।
ক্ষিতীশ তাই বকুনি দেওয়ার বদলে বলেছিল , “ হিয়া তখন আমাকে কী বলল জানিস ? বলল , মেয়েটা আমার কাছে মার খেয়েছে তাই জ্বলে পুড়ে মরছে । ”
এরপর ক্ষিতীশ লক্ষ করল কোনি জল থেকে উঠতে দেরি করছে ।