![]() |
ছবি :- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পাঠ্যপুস্তক |
লেখক :- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
লেখকের পরিচিত :- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (জন্ম- ২০ জুলাই ১৮৯২ - মৃত্যু-০৫ মার্চ ১৯৬১)একজন বাঙালি নাট্যকার, সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সত্যচরণ সেনগুপ্ত। লেখকের সম্বন্ধে আরো পড়ুন ।
সিরাজ । ওয়াটস !
ওয়াটস । Your Excellency !
সিরাজ । কলকাতা জয়ে যখন আমরা যাত্রা করি , তখন তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলে । সুতরাং কলকাতা জয়ের ইতিহাস তুমি জান । তুমি জান যে কলকাতা জয় করে সেই নগরের নাম আমরা আলিনগর
রাখি ।
ওয়াটস । জানে Your Excellency !
সিরাজ । আলিনগরে তােমাদের কোম্পানির সঙ্গে যে সন্ধি হয় , তার সব শর্তও তােমাদের জানা আছে ।
তােমাদের কোম্পানি সন্ধির সকল শর্ত যাতে রক্ষা করে তারই জন্যে প্রতিভূরূপে তােমাকে মুর্শিদাবাদে রাখা হয়েছে । কোম্পানি সন্ধি - শর্ত রক্ষা না করলে , যুদ্ধঘােষণার আগেই , তােমাকে আমরা তোপের মুখে উড়িয়ে দিতে পারি , জান ?
ওয়াটস । জানে Your Excellency !
সিরাজ । তুমি প্রস্তুত হও ।
ওয়াটস । আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ ।
সিরাজ । তােমাদের অপরাধ , সভ্যতার , শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে । স্পর্ধা তােমাদের আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেছে । শুধু শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় আমি এতদিন তােমাদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এসেচি । কিন্তু ভদ্রতার অযােগ্য তোমরা !
ওয়াটস । আপনার অভিযােগ বুঝিতে পারিলাম না।
সিরাজ । মুন্সিজি , অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্র ।
[ মুন্সিজি একখানি পত্র বাহির করিলেন ]
সিরাজ । এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান ?
[ মুন্সি পত্র ওয়াটসকে দিলেন ওয়াটস পড়িতে লাগিলেন ]
শেষের দিকে কী লেখা আছে ?
ওয়াটস I now acuaint you , that the remainder of the troops , which should have been here long since ( and which I hear the Colonel told you he expected ) will be at Calcutta in a few days ; that in a few days more I shall despatch a vessel for more ships and more troops and that I will kindle such a flame in your country as all the water in the Ganges shall not be able to extinguish .
সিরাজ । মুন্সিজি , এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন ।
[ মুন্সি পত্র লইয়া বাংলা তর্জমা শুনাইলেন ]
মুন্সি । কর্নেল ক্লাইভ যে সৈন্যের কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন , তাহা শীঘ্রই কলিকাতায় পৌছিবে । আমি সত্বর আর একখানা জাহাজ মাদ্রাজে পাঠাইয়া সংবাদ দিব যে , আরাে সৈন্য এবং আরাে জাহাজ বাংলায় আবশ্যক । বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব , যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানাে যাইবে না ।
সিরাজ । ওয়াটস ! এ ভীতি প্রদর্শনের অর্থ কী ?
ওয়াটস । Admiral এ - কথা লিখিয়াছেন কেন , আমি বুঝি না ।
সিরাজ । বুঝিয়ে আমি দিচ্ছি । মুন্সিজি , ওয়াটসের পত্র !
[ মুন্সি পত্রখানা বাহির করিলেন ]
আপনিই পড়ুন , ওর হাতে দেবেন না । আচ্ছা , ওকে একবার
দেখিয়ে নিন ।
[ ওয়াটস পত্র দেখিল ]
বলতে পার যে , তোমার হাতের লেখা নয় ?
ওয়াটস । হাঁ , আমি লিখিয়াছে ।
সিরাজ । পড়ুন মুন্সিজি ।
মুন্সি It is impossible to rely upon the Nabob and it will be wise to attack Chandernagore . নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব । চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
সিরাজ । তােমাদের অভদ্রতার , ঔদ্ধত্যের আরাে পরিচয় চাও ? জেনে রাখাে , তাও আমি দিতে পারি । আমার সভাসদরা , আমার স্বদেশীয়রা তারস্বরে ঘােষণা করে — আমি নির্বোধ , অত্যাচারী , বিলাস - সর্বস্ব ; কিন্তু আমি যে সকলের শয়তানির সন্ধান রাখি , তার সামান্য পরিচয় আজ দিয়ে রাখলাম । তুমি ওয়াটস , তুমি আমারই দরবারে স্থান পেয়ে আমার সভাসদদের আমারই বিরুদ্ধে উত্তেজিত কর , কলকাতায় ইংরেজদের উপদেশ দাও আমারই আদেশ লঙ্ঘন করে কাজ করতে । জান এর শাস্তি কী ?
ওয়াটস Punish me , Your Excellency , if you will . I can only say that I have done my duty .
সিরাজ । এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করাে । ভবিষ্যতে আর কখনাে এ - দরবারে তুমি স্থান পাবে না । তােমার কোম্পানি যদি সদ্ব্যবহার দিয়ে আমাকে আবার খুশি করতে পারে , তা হলাে কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে কোনাে সচ্চরিত্র ইংরেজকে আমি দরবারে স্থান দোব , তােমাকে নয় — আর তাও এখন নয় । যাও ।
ওয়াটস Farewell , Your Excellency !
[ নবাবকে কুর্নিশ করিয়া ওয়াটস বাহির হইয়া গেলেন ]
রাজবল্লভ । জাঁহাপনা !
সিরাজ । একটু অপেক্ষা করুন রাজা । — মঁসিয়ে লা ।
মঁসিয়ে লা । At your command , Your Excellency .
[ সিংহাসনের সামনে গিয়ে কুনিৰ্শ করিলেন ]
সিরাজ । তােমাদের কাছে আমি লজ্জিত । তােমরা, ফরাসিরা , বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করছ । আমার সঙ্গে কখনাে তােমরা অসদ্ব্যবহার করনি । ইংরেজদের সঙ্গে তােমাদের বিবাদ আজকাল নয় , আর এ - দেশের কোনাে ব্যাপার নিয়েও নয় । সাগরের ওপারে তােমরা পরস্পর পরস্পরের টুটি চেপে মারলেও আমার কিছু বলবার থাকে না । আমার রাজ্যে তােমরা শান্ত হয়ে থাক , এই আমার কামনা । ইংরেজরা আমার সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেচে , সমস্ত ফরাসি বাণিজ্য কুঠি তাদের ছেড়ে দেওয়া হােক এই মর্মে দাবি উপস্থিত করেছে । তােমরা প্রতিকারের আশায় আমার কাছে উপস্থিত হয়েচ ।
মঁসিয়ে লা । We have always sought for your protection , Your Excellency .
সিরাজ । কলকাতা জয়ে আর পূর্ণিয়ার শওকতজঙ্গের সঙ্গে সংগ্রামে আমার বহু লােকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে । আমার মন্ত্রিমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন । এরূপ অবস্থায় , তােমাদের প্রতি আমার অন্তরের পূর্ণ সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও, আমি তােমাদের জন্যে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে প্রবৃত্ত হতে পারি না । আমার এই অক্ষমতার জন্যে তােমরা আমাকে ক্ষমা করাে ।
[ সভা কিছুকাল স্তব্ধ রহিল । মঁসিয়ে - লা মাথা নত করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন । তাহার পর ধীরে মাথা তুলিয়া নবাবের দিকে চাহিলেন , ক্ষুব্ধকণ্ঠে কহিলেন : ]
মঁসিয়ে লা Your Excellency ! You refuse us your help your protection - though with great reluctance . I appreciate your feelings . I understand the predicament you are in , I am sorry for you . And I am sorry for ourselevs . We have no other choice than to leave this land , which we have learnt to love . Allow me, Your Excellency , to warn you that you are in a great danger . On our departure from this land , the smothered flame will burst forth and will destroy your kingdom and people .
[ সিরাজ সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন । সিয়ে - লার সামনে দাঁড়াইয়া কহিলেন : ]
সিরাজ । আমার বিপদ সম্বন্ধে আমাকে সচেতন করে তুমি আমার প্রতি তােমার অন্তরের প্রীতিরই পরিচয় দিয়েছ । তােমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে । প্রয়ােজন হলে আমি তােমাকে স্মরণ করব । তখন যেন আমাকে ভুলাে না বন্ধু ।
মঁসিয়ে লা । I know we shall never meet .
[ দুইজনেই চুপ করিয়া রহিলেন ]
Farewell , Your Excellency !
[ কুনিৰ্শ করিয়া চলিয়া গেলেন । সিরাজ তাহার পিছুপিছু খানিকটা অগ্রসর হইয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন । তারপর দ্রুত ফিরিয়া রাজা রাজবল্লভের নিকট অগ্রসর হইয়া। কহিলেন ]
সিরাজ । আপনি যেন কী বলবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন , রাজা ?
রাজবল্লভ । এখন সে কথা নিরর্থক ।
[ সিরাজ হাসিয়া বলিলেন ]
সিরাজ । জানেন ত ! আমাকে কোনাে কথা বলেই লাভ নেই — সর্ব - চিকিৎসার বাইরে আমি !
[ সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন ]
রাজবল্লভ । ওয়াটস সাহেবকে ওরকম করে বিদায় না দিলেও চলত ।
[ সিরাজ ফিরিয়া আসিলেন ]
সিরাজ । ওয়াটস - ক্লাইভ - ওয়াটসন কোম্পানির কথা থাক , ইংরেজ - ফরাসি - পাের্তুগীজ প্রসঙ্গ পরিহার করুন । নিজেদের কথা বলুন রাজা , নিজেদের কথা ভাবুন ।
জগৎশেঠ । ভাবা যখন উচিত ছিল , তখন যে কিছুই ভাবেননি জাঁহাপনা !
[ সিরাজ দ্রুত তাহার দিকে ফিরিলেন ]
সিরাজ । সে অপরাধ কি বার বার আমি স্বীকার করিনি ! আপনাদের সকল অভিযােগ অবনত মস্তকে আমি গ্রহণ করিচি । কখনাে কোনাে কটুক্তির প্রতিবাদ করিনি । আপনাদের স্পর্ধা নিয়ে কখনও প্রশ্নও তুলিনি । আপনারা সারা দেশে আমার দুর্নাম রটিয়েচেন , কর্মচারীদের মনে অশ্রদ্ধা এনে দিয়েছেন , আত্মীয় - স্বজনের মন দিয়েছেন বিষিয়ে । আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা ?
জগৎশেঠ । আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করে আমাদের লাভ ?
সিরাজ । স্বার্থসিদ্ধি ।
জগৎশেঠ । স্বার্থের সন্ধানে আমরা যদি নিযুক্ত থাকতাম—
সিরাজ । বলুন , তা হলে ?
জগৎশেঠ । তা হলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন ।
সিরাজ । এত বড়াে কথা আমার মুখের ওপর বলতে আপনার সাহস হয় ।
জগৎশেঠ । আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েছে ।
সিরাজ । আমার উপদ্রব নয় শেঠজি , আমার সহিষ্নুতাই আপনাদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে ।
মীরজাফর । জাঁহাপনা মানী - লােকের মানহানি করে আপনি আমাদের সকলেরই অপমান করেছেন ।
সিরাজ । সকলে মিলে আপনারাই কি আমার কম অপমান করেছেন !
রাজবল্লভ । আমরা কেউ মিথ্যা কলঙ্ক রটাইনি ।
সিরাজ । সত্যাশ্রয়ী রাজা ! বলুন , সিংহাসনে আরােহণ করবার পরে , এই এক বছরের মধ্যে , কী অনাচার আমি করেছি ? বলুন । কটা রাত আমি নিশ্চিন্তে কাটিয়েচি , কটা দিন আপনারা আমাকে বিশ্রামের অবসর দিয়েচেন ? বলুন !
রাজবল্লভ । আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন - প্রণালী আমাদের কণ্ঠস্থ থাকবার কথা নয় ।
সিরাজ । অথচ কবে , কোথায় , কখন , কোন অনাচার আমি করিচি , তা আপনারা নির্ভুল বলে দিতে পারেন !
রাজবল্লভ । পারি এই জন্যই যে পাপ কখনও চাপা থাকে না ।
সিরাজ । পাপ যে চাপা থাকে না , হােসেনকুলী প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে ।
[ রাজবল্লভের সম্মুখে গিয়া ]
নিজের জীবন দিয়ে কি আবার তা বুঝতে চান?
[ রাজবল্লভ মাথা নীচু করিলেন ]
শেঠজি , জাফর আলি খা , আপনাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখুন !
মীরজাফর । এই তরবারি স্পর্শ করে আমি শপথ করচি জাহাপনা , আপনি যদি মানী - লােকের এইরূপ অপমান করেন , তা হলে আপনার স্বপক্ষে কখনাে অস্ত্র ধারণ করব না ।
মােহনলাল । আজ পর্যন্ত কদিন তা ধারণ করেচেন, সিপাহসালার ?
মীরজাফর । পূর্ণিয়ার যুদ্ধে অপদার্থ শওকতকে হত্যা করে বুঝি এই স্পর্ধা তােমার হয়েছে মােহনলাল ?
মীরমদন । কোনাে যুদ্ধে কৃতিত্ব না দেখিয়েও আমি জিজ্ঞাসা করচি , কলকাতা জয় থেকে শুরু করে পূর্ণিয়া বিজয় পর্যন্ত কবে সিপাহসালার নবাবকে সাহায্য করেছেন ?
মীরজাফর । জাঁহাপনা । নীচের এই স্পর্ধা !
মােহনলাল । নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালােচনা করা উচিত নয় , এ - কথা যেমন আপনাদের সব সময়েই মনে থাকে, তেমন এ - কথাও মনে রাখা কি উচিত নয় যে , নবাবের কাজের সমালােচনাও সব সময়ে শােভন নয় ?
মীরমদন । এ রাজ্যের সকল প্রধান প্রধান সেনাপতি , আমির ওমরাহ , রইস রাজা , মনে করেছেন , নবাব একেবারে অসহায় ; সিংহাসন রক্ষা তনয়ই — আত্মরক্ষার শক্তিও তার নেই । আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না , এ কথা তাদের মনে রাখা উচিত ।
মীরজাফর । এই সব অর্বাচীনকে দিয়েই যখন নবাবের কাজ চলবে , তখন চলুন রাজা রাজবল্লভ, চলুন শেঠজি , চলুন দুলভরায় , এই দরবার আমরা ত্যাগ করি । নবাব থাকুন তার কর্মক্ষম , শক্তিমান , পরম বিচক্ষণ মন্ত্রী আর সেনাপতিদের নিয়ে । গােলামহােসেন , মােহনলাল আর মীরমদন যখন রয়েছে , তখন আর ভাবনা কী ? চলুন ।
[ রাজবল্লভ , জগৎশেঠ , দুর্লভরায় প্রস্থানের উদ্যোগ করিলেন ]
সিরাজ । দাঁড়ান !
[ সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন ]
দরবার ত্যাগ করতে হলে নবাবের অনুমতি নিতে হয় , এ কথাও আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে? মীরজাফর । দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা ।
সিরাজ । বাধ্য হয়ে দরবার ত্যাগ করতে হবে আপনাদের তখন , যখন আপনাদের বন্দি করা হবে । মুন্সিজি , সিপাহসালারের কাছে ওয়াটস যে পত্র লিখেছিলেন , সেই পত্র ।
[ মুন্সিজি পত্র বাড়িতে লাগিলেন ]
মীরজাফর । আমার কাছে ওয়াটস পত্র লিখেছিলেন !
সিরাজ । হাঁ , নবাবের সিপাহসালার ! খােজা পিড়ুর মারফত ওয়াটস এই পত্রখানি আপনারই উদ্দেশে পাঠিয়েছিল ; কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্যবশত আমাদের হস্তগত হয়েচে । দেখতে চান ?
মীরজাফর । নবাবের অনুগ্রহ ।
সিরাজ । সভাসদদের শুনিয়ে দোব ?
মীরজাফর । পত্রের বিষয় ত আমি অবগত নই জাঁহাপনা ।
সিরাজ । সবাইকে শুনিয়ে আপনাকে লজ্জা দেবাে না । কেন না আপনি আমার সিপাহসালার । পত্রখানা আপনাকে দেখতেও দোব না , কেন না তা হলে যে উদ্দেশ্যে এই পত্র প্রেরিত হয়েছিল , তাই সিদ্ধ হবে ।
মীরজাফর । জাঁহাপনা তা হলে কী করবেন স্থির করেচেন ?
সিরাজ । রাজদ্রোহে লিপ্ত প্রজা সম্বন্ধে কী ব্যবস্থা করা উচিত বিবেচনা করেন ?
[ মীরজাফর কোন কথা কহিলেন না ]
রাজা রাজবল্লভ কী বলেন ?
রাজবল্লভ । আমারও কোনাে গােপন - লিপি কি জাঁহাপনা আবিষ্কার করেছেন ?
সিরাজ । রাজা রাজবল্লভকে আমরা চিনি । তিনি কাঁচা কাজ করেন না । জাফর আলি খাঁ !
মীরজাফর । নবাব কি প্রকাশ্য দরবারেই আমার বিচার করতে চান ?
[ নবাব তাহার দিকে চাহিলেন তিনি সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন ]
সিরাজ । জাফর আলি খাঁ ! আজ বিচারের দিন নয় , সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন । অন্যায় আমিও করেচি , আপনারাও করেচেন । খােদাতালার কাছে কে বেশি অপরাধী তা তিনিই বিচার করবেন। আজ আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে , আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন যে , বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না ।
রাজবল্লভ । এই দুর্দিনের জন্য কে দায়ী জনাব ?
সিরাজ । আবারও বিচার রাজা !
রাজবল্লভ । বিচার নয় জাহাপনা । আমি বলতে চাই যে , এখনও সময় আছে । এখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপােষে নিস্পত্তি সম্ভবপর ।
সিরাজ । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপােষ ! রাজা , ওয়াটসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও কি আপনারা তাদের মনােভাব বুঝতে পারেননি ? কলকাতায় সৈন্যসমাবেশ , চন্দননগর আক্রমণ , কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান , সবই কি শান্তি স্থাপনের প্রয়াস ?
জগৎশেঠ । নবাব যদি কলকাতা আক্রমণ না করতেন , তা হলে এসব কিছুই আজ হতাে না ।
সিরাজ । কলকাতার দুর্গকে তারা যদি দুর্ভেদ্য করে তুলতে না চাইত , তা হলে আমাকেও কলকাতা আক্রমণ করতে হতাে না ! বাংলাদেশ অরাজক ছিল না । কোম্পানির দুর্গ প্রতিষ্ঠার কী প্রয়ােজন ছিল বলতে পারেন ?
মীরজাফর । আপনি আমাদের কী করতে বলেন জাহাপনা !
সিরাজ । সবার আগে বলি — বাংলার মান , বাংলার মর্যাদা , বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে , বুদ্ধি দিয়ে , সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন । আপনাদের সকলের সমবেত চেষ্টার ফলে যদি এই বিপদ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাই , তা হলে একদিন আপনারা আমার বিচারে বসবেন । সেদিন যে দণ্ড আপনারা দেবেন , আমি মাথা পেতে নোেব । আমাকে অযােগ্য মনে করে আর কাউকে যদি এই সিংহাসনে বসাতে চান , আমি হৃষ্টমনে সিংহাসনে ছেড়ে দোব ।
[ সকলে নীরব রহিলেন ]
জাফর আলি খাঁ , আপনি শুধু সিপাহসালার নন , আপনি আমার পরম আত্মীয় । বিপদে আপন - জন জেনে বুকে ভরসা নিয়ে যার কাছে দাঁড়ানাে যায় সেই না আত্মীয় । লােভে পড়ে , অথবা মােহের বশে , মানুষ অনেক সময় । অনেক অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয় ; কিন্তু কর্তব্যের আহ্বানে লােভ মােহ জয় করে যে মেরুদণ্ড সােজা করে দাঁড়াতে পাবে , সেই তো পুরুষ । সে পৌরুষ আপনার আছে , আমি জানি ।
[ একটু চুপ করিয়া সকলের মুখভাব লক্ষ। করিয়া। দেখিলেন । তারপর আবার বলিতে লাগিলেন ]
রাজা রাজবল্লভ , ভাগ্যবান জগৎশেঠ , শক্তিমান রায়দুর্লভ , বাংলা শুধু হিন্দুর নয় , বাংলা শুধু মুসলমানের নয় — মিলিত হিন্দু - মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা । অপরাধ আমি যা করিচি , তা মিলিত হিন্দু - মুসলমানের কাছেই করিচি — আঘাত যা পেয়েছি তাও মিলিত হিন্দু - মুসলমানের কাছ থেকেই পেয়েছি । পক্ষপাতিত্বের অপরাধে কেউ আমরা অপরাধী নই । সুতরাং আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না ।
[ আবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন আবার বলিলেন : ]
বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা , তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা , জাতির সৌভাগ্য - সূর্য
আজ অস্তাচলগামী ; শুধু সুপ্ত সন্তান - শিয়রে রুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত । কে তাকে আশা দেবে ? কে তাকে ভরসা দেবে ? কে শােনবে জীবন দিয়েও রােধ করব মরণের অভিযান ?
মীরজাফর । জাঁহাপনা , জনাব !
সিরাজ । আপনি ! হাঁ আপনি সিপাহসালার , আপনিই তা পারেন ।
মীরজাফর । আমি শপথ করচি জাহাপনা , আজ থেকে সর্বসময়ে সর্বক্ষেত্রে , আপনার সহায়তা করব ।
মােহনলাল । আমিও শপথ করচি সিপাহসালারের সকল নির্দেশ মাথা পেতে নেব ।
মীরমদন । তার আদেশে হাসিমুখেই মৃত্যুকে বরণ করব ।
সিরাজ । আমি আজ ধন্য ! আমি ধন্য !
গােলামহােসেন । জনাব , পলাশির কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছিলেন ।
সিরাজ । হাঁ , পলাশি ! সিপাহসালার , পলাশি - প্রান্তরে আমাদের সৈন্য সমাবেশ করতে হবে । ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানির ফৌজ সেই পথেই এগিয়ে আসছে । আপনার আদেশ পালন করবার জন্য রায়দুর্লভ , ইয়ারলতিফ , মােহনলাল , মীরমদন , সিনফ্রে , সবাই নিজ নিজ সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবেন । আমিও আপনার আদেশবহ হয়ে থাকব । আপনাদের আর আমি দরবারে আবদ্ধ রাখব না । আপনারা পলাশি যাত্রার আয়ােজন করুন ।
[ প্রথমে সৈন্যাধ্যক্ষণ এবং পরে সভাসদগণ দরবার ত্যাগ করিলেন । রহিলেন শুধু সিরাজ আর গােলামহােসেন । সিরাজ চারিদিকে চাহিলেন , তারপর ধীরে ধীরে সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন , সামনে নুইয়া পড়িয়া সিংহাসনের দিকে চাহিয়া রহিলেন , ঘাড় ঘুরাইয়া অস্ফুট কণ্ঠে ডাকিলেন ]
সিরাজ । গােলামহােসেন !
গােলামহােসেন । জাহাপনা !
সিরাজ । সিংহাসন কি টলছে ?
গােলামহােসেন । না , জাঁহাপনা ।
সিরাজ । ভালাে করে দ্যাখ ত ।
[ দুইজনেই সিংহাসন দেখিতে লাগিলেন । ধীরে ধীরে ঘসেটিবেগম প্রবেশ করিলেন , দাঁড়াইয়া দেখিলেন । তারপর কহিলেন : ]
ঘসেটি । ওখানে কী দেখচ মূর্খ , বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখাে !
সিরাজ । কে !
[ দ্রুত ঘুরিয়া দাঁড়াইয়া ঘসেটিকে দেখিলেন । হাসিয়া
কহিলেন ]
ও আপনি !
[ কাছে অগ্রসর হইলেন ]
কাজ আছে ? তা স্মরণ করলেই ত দেখা করতাম।
ঘসেটি । নবাবের অবসরের বড়ােই অভাব , না ?
সিরাজ । বিপদ এমনি ঘনিয়ে আসছে যে , একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছি ।
ঘসেটি । এখনও বিপদ ? ঘসেটি বেগম তােমার বন্দি , শওকতজঙ্গ রণক্ষেত্রে নিহত , প্রতিদ্বন্দ্বী আর কোথাও নেই , এখনও বিপদের ভয় !
সিরাজ । কোম্পানির ফৌজ কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান করেছে ।
ঘসেটি । করেচে !
সিরাজ । সেই সংবাদই পেয়েছি !
ঘসেটি । তা হলে মুর্শিদাবাদেও তারা আসবে ?
সিরাজ । তেমনি দুর্দিন কে কামনা করে মা !
ঘসেটি । দুর্দিন না সুদিন ?
সিরাজ । সুদিন !
ঘসেটি । সুদিন নয় ? ঘসেটির বন্ধন মােচন হবে , সিরাজের পতন হবে , সুদিন নয় ?
সিরাজ । আপনি বুঝতে পারছেন না , আপনি কী বলছেন !
ঘসেটি । বেশ বুঝতে পারছি । অন্তরে যে কথা দিন - রাত গুমরে গুমরে মরচে , তাই আজ ভাষায় প্রকাশ করচি । মাসিকে তুমি গৃহ - হারা করেচ , মাসির সর্বস্ব লুটে নিয়েচ , মাসিকে দাসী করে রেখেচ । মাসি তা ভুলবে ?
সিরাজ । অকারণে অভাগাকে আর তিরস্কার করবেন না ।
ঘসেটি । অকারণে ।
সিরাজ । নয় কি ?
ঘসেটি । মতিঝিল কে অধিকার করেছে ? আমার সঞ্জিত সম্পদ কে হস্তগত করেচে ? কে আমার পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রেখেচ ? তুমি নও , দস্যু ?
সিরাজ । মতিঝিল আপনারই রয়েছে মা ।
ঘসেটি । তা হলে সেখানে যাবার অধিকার কেন আমার নেই ?
সিরাজ । রাজনীতির কারণে ।
ঘসেটি । তােমার রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ? আমার রাজ্য নাই , তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই — আছে শুধু প্রতিহিংসা । এই প্রতিহিংসা আমার পূর্ণ হবে সেইদিন — যেদিন তােমার এই প্রাসাদ অপরে অধিকার করবে , তােমাকে ঐ সিংহাসন থেকে ঠেলে ফেলে শওকতজঙ্গের মতাে কেউ যেদিন তােমাকে ...
[ লুৎফা ছুটিয়া আসিল ]
লুৎফা । মা , মা , তােমার মুখের ও - কথা শেষ কোরাে না মা ।
ঘসেটি । নবাব - মহিষী !
লুৎফা । নবাব - মহিষী নই মা , তােমার কন্যা ।
ঘসেটি । নবাব - মহিষী নও ? আজ ভাবচ খুবই বিনয় করলে , কিন্তু দুদিন বাদে ওই কথাই সত্য হবে । এই আমার মতাে জীবন যাপন করতে হবে ।
লুৎফা । নবাব !
ঘসেটি । নবাব - মহিষী এই বাঁদির বিরুদ্ধে অভিযােগ করচেন নবাব । বাঁদিকে দণ্ড দিয়ে মহিষীকে খুশি করুন ।
লুৎফা । জাঁহাপনা , ওকে ওঁর প্রাসাদে ফিরে যেতে দিন ।
সিরাজ । দোব লুৎফা — সময় এলেই পাঠিয়ে দোব ।
ঘসেটি । এখনাে আশা – সময় আসবে ?
লুৎফা । অমন করে ওকথা বলাে না মা । বুক আমার কেঁপে ওঠে ।
ঘসেটি । তােমার বুক কেঁপে ওঠে । আর আমার বুক যে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে , তা কি তােমরা বুঝেচো , না কখনাে বুঝতে চেয়েচ ? অনাথা বিধবা আমি , নিজের গৃহে দুঃখকে সাথি করে পড়েছিলাম , অত্যাচারের প্রতিকারে অক্ষম হয়ে ডুকরে কেঁদে সান্ত্বনা পেতাম । তােমরা তাতেও বাদ সাধলে , ছল করে ধরে এনে পাপ - পুরীতে বন্দিনী করে রাখলে । তােমাদের আমি ক্ষমা করব ।
সিরাজ । আর আমরাই বুঝি ক্ষমা করব বিদ্রোহিনীকে । মায়ের মতাে সম্মান দিয়ে মায়ের বােনকে মায়ের পাশেই বসিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম । তােমার তা ভালাে লাগছে না । আজ ভয় হচ্ছে শেষটায় না বাধ্য হয়ে তােমাকে বন্দিনীর মতােই কারাগারে স্থান দিতে হয় ।
লুৎফা । নবাব ! জাহাপনা ।
সিরাজ । ঘরে - বাইরে প্রতিনিয়ত এই বাক্যজ্বালা আমি আর সইতে পারি না লুৎফা ! এমন কোনাে অপরাধ । আমি করিনি , যার জন্যে সকলের কাছে সব সময়ে অপরাধীর মতাে আমাকে করজোড়ে থাকতে হবে ।
[ দুই হাতে মাথা চাপিয়া ধরিলেন ]
ঘসেটি । অপরকে বঞ্চিত করে যে সিংহাসন পেয়েচ , সে সিংহাসন তােমাকে শাস্তি দেবে ভেবেচ ?
সিরাজ । আমি জানি কেমন করে ওদের কণ্ঠ রােধ করা যায় , কেমন করে স্পর্ধায় উন্নত ওদের শির আমার পায়ের তলায় নুইয়ে দেওয়া যায় । শুধু আমার মুখের একটি কথা , চোখের একটি ইঙ্গিত সাপেক্ষ । আমি তাও পারি না । পারি না শুধু আমি কঠোর নই বলে , পারি না শুধু পরের ব্যথায় আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে বলে ।
[ ক্ষোভে দুঃখে সিরাজ প্রায় কাদিয়া ফেলিলেন । লুৎফা তাহার কাছে গিয়া কহিলেন ]
লুৎফা । নবাব , জাহাপনা , আপনার চোখে জল ? আমি যে সইতে পারি না ।
ঘসেটি । আজকার এ কান্না শুধুই বিলাস ; কিন্তু এ কান্নায় বিরাম নেই । চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না । বেগমকে আজীবন আমারই মতাে কেঁদে কাটাতে হবে । আমিনা কেঁদে কেঁদে অন্ধ হবে ! পলাশি - প্রান্তরে কোলাহল ছাপিয়ে উঠবে ক্রন্দন - রােল । সিরাজের নবাবির এই পরিণাম !
[ ঘসেটি চলিয়া গেলেন । নবাব তাহার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন , লুৎফা তাহাকে ধরিলেন ]
সিরাজ । বলতে পার লুৎফা , বলতে পার , ওই ঘসেটি বেগম মানবী না দানবী ?
লুৎফা । ওকে ওর প্রাসাদে পাঠিয়ে দিন জাঁহাপনা । ওর সঙ্গে থাকতে আমার ভয় হয় । মনে হয় , ওর নিশ্বাসে বিষ , ওর দৃষ্টিতে আগুন , ওর অঙ্গ - সঞ্চালনে ভূমিকম্প !
সিরাজ । মাত্র পনেরােটি মাস আমি রাজত্ব করচি , লুৎফা ! এই পনেরাে মাসে আমার এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে , মানুষের এমনি নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েছি যে , কোনাে মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না , ভালােও বাসতে পারি না ।
লুৎফা । চলুন জাঁহাপনা , একটু বিশ্রাম করবেন ।
সিরাজ । বিশ্রাম ! বিশ্রামের অবসর হবে পলাশির পর ।
লুৎফা । পলাশি ! সে কি জাহাপনা ?
সিরাজ । তুমি এখনও শােনােনি ? পলাশির মাঠে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা ।
লুৎফা । আবার যুদ্ধ ! জাহাপনা ?
সিরাজ । পনেরাে মাসের নবাবি লুৎফা , তার মাঝে পুরাে একটি বছর যুদ্ধে , ষড়যন্ত্রভেদে , গুপ্তচর পরিচালনায় অতিবাহিত হয়েছে । এইবার হয় তো শেষ যুদ্ধ !
লুৎফা । শেষ যুদ্ধ !
সিরাজ । যদি জয়ী হই , তা হলে হয়তাে আর যুদ্ধ হবে না — আর যদি পরাজিত হই , তা হলে তাে নয়ই ।
লুৎফা । পলাশি !
সিরাজ । পলাশি ! লাখে লাখে পলাশ - ফুলের অগ্নি - বরণে কোনােদিন হয়তাে পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত , তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা । জানি না , আজ কার রক্ত সে চায় । পলাশি , রাক্ষসী পলাশি !
[ নবাব বাহির হইয়া গেলেন । মঞ্চ অন্ধকার হইয়া গেল । করুণ সুরে বাদ্য বাজিল । যবনিকা পড়িল ]
