![]() |
ছবি :- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পাঠ্যপুস্তক |
লেখক :- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লেখকের পরিচিত :- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয় । রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়
উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত ,
তার সেই অধৈর্যে ঘন - ঘন মাথা নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু
প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে
ছিনিয়ে নিয়ে গেল তােমাকে , আফ্রিকা
বাঁধলে তােমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
কৃপণ আলাের অন্তঃপুরে ।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি
সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য চিনছিলে জলস্থল -
আকাশের সুবোধ সংকেত,
প্রকৃতির দৃষ্টি - অতীত জাদু
মন্ত্র জাগাচ্ছিল , তােমার চেতনাতীত মানে ।
বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে বিরূপের ছদ্মবেশে ,
শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে
আপনাকে উগ্র ক'রে বিভীষিকার প্রচণ্ড
মহিমায় তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে ।।
হায় ছায়াবৃতা ,
কালাে ঘােমটার নীচে
অপরিচিত ছিল তােমার মানবরূপ
উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে ।
এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে ,
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তােমার নেকড়ের চেয়ে ,
এল মানুষ - ধরার দল গর্বে যারা অন্ধ
তােমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লােভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষ ।
তােমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে।
পকিল হলাে ধূলি তােমার রক্তে অশ্রুতে মিশে ,
দস্যু - পায়ের কাটা - মারা জুতাের তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড চিরচিহ্ন দিয়ে
গেল তােমার অপমানিত ইতিহাসে ।
সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়।
মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা
সকালে সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নামে ;
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে ;
কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল
সুন্দরের আরাধনা ।।
আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে
প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস ,
যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল
অশুভ ধ্বনিতে ঘােষণা করল দিনের অন্তিমকাল,
এসাে যুগান্তের কবি ,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে ;
বলাে ‘ ক্ষমা করাে’
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হােক তােমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী ৷৷
