ছােটমামার ব্যাপারটা বাংলা ভূতের গল্প - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

রহস্যময় সব অলৌকিক ভূতপেত্নী গল্প অনলাইনে পড়ুন অথবা পিডিএফ ডাউনলোড করুন ।



                    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


ছোটমামা আড়ষ্ট গলায় বললেন, ঐ দ্যাখ নীলু। সামনের দিকে তাকিয়ে আমি হেসে ফেললাম। একটা খুবই নিরীহ চেহারার কুকুর। একদম নেড়ি কুত্তা; যাকে বলে রােগা, লম্বাটে, মুখখানা ভীতু-ভীতু। এই কুকুরকে দেখেও ছােটমামার ভয়। অথচ মজা এই যে ছােটমামা জানােয়ারে ভীষণ ইন্টারেস্ট, যদি সেটা খাঁচার জানােয়ার হয়।
এখনও এই বয়সে প্রতি মাসে একবার করে চিড়িয়াখানায় যাওয়া চাই।

গ্রামের রাস্তা, কাদায় একেবারে চটচটে। দু'পাশে মাঠ, মাঝখান দিয়ে উঁচু রাস্তা। প্রত্যেক বছরই বােধহয় রাস্তাটার নতুন মাটি ফেলা হয়, আর বর্ষার সময় সেই মাটি আস্তে আস্তে গলে ধুয়ে যায়। গরুর গাড়ি ছাড়া এ রাস্তায় কিছু চলে না।

যখনকার কথা বলছি, তখন আমার বয়স উনিশ আর ছােটমামার বয়স পঁয়তিরিশ। ছােটমামার ছিপছিপে লম্বা চেহারা, চোখে সােনালী ফ্রেমের চশমা, সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী ছাড়া কক্ষনাে কিছু পরতেন না। অদ্ভুত তার
বইয়ের নেশা। ঠিক পছন্দ মতন বই পেলে তা নিয়ে ছােটমামা ভুলে থাকতে পারেন। আর জানােয়ারের বই হলে তাে কথাই নেই। নাওয়া খাওয়ার কথা মনে থাকে না।

সে দিনটার কথা আমি কোনদিন ভুলব না।

মুর্শিদাবাদ জেলার সালার নামে এক রেল স্টেশনে নেমে আমরা দু'জনে যাচ্ছিলাম সাত মাইল দূরের এক নবাববাড়ীতে। আসল নবাব নয়, তাদেরই হয়তাে দূর সম্পর্কের কোন আত্মীয়। কিংবা অনেক ছােটখাটো মুসলমান জমিদারদেরও লােকে নবাব বলত। যেমন অনেক হিন্দু জমিদারের বাড়ীকেই লােকে বলত রাজবাড়ী।

এইনবাব বাড়ীতে অনেক পুরােন বই আছে শুনেছিলাম। আগেকার দিনে নবাবরা চিতাবাঘ-টিতাবাঘ পুষত, তাই ছােটমামার বিশ্বাস, এ বাড়ীতেও জানােয়ারের বই থাকা আশ্চর্য নয়। আমরা যাচ্ছিলাম সেই বইয়ের খোঁজে।

গরুর গাড়ি ছাড়া এই সাত মাইল পথ যাবার আর কোন ব্যবস্থা নেই। অন্তত তখন ছিল না। গরুর গাড়িটা আমার খুব পছন্দ নয়। ছােটমামাও বলেছিলেন, ফেরার সময় বইপত্র নিয়ে তাে গরুর গাড়িতে আসতেই হবে; চল, এখন হেঁটেই যাই।

পথের মধ্যে সেই কুকুর। গ্রামের রাস্তায় এরকম একটা দুটো কুকুর তাে থাকবেই। ছােটমামাকে নিয়ে বাইরে বেরুনাের এই এক মুস্কিল।

ছােটমামা যেমন কুকুরটাকে দেখে ভয় পেয়েছেন, কুকুরটাও সেই রকম আমাদের দেখে ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে।

ছােটমামা বললেন, নীলু কুকুরটাকে তাড়া।

আমি বললাম, ও কিছু করবে না। আমরা এগােলেই ও সরে যাবে।

উহুঃ! পাগলা কুকুর হতে পারে। দেখছিস না, ল্যাজ ঝােলা।

ভয় পেলে সব কুকুরেরই ল্যাজ ঝুলে যায়।

জিভ বার করে আছে।

হাঁপিয়ে গেছে বােধহয়। কুকুর জিভ বার করে দম নেয়।

কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয় জানিস? নেড়ি কুত্তা কামড়ালেও হয়, বুলডগ কামড়ালেও হয়।

কুকুরের ব্যাপারে আমিও যে খুব একটা সাহসী তা নয়। অনেক জায়গায় খুব বড় সাইজের এ্যালসেসিয়ান, গ্রেটডেন বা ডােবারম্যান জাতীয় কুকুর দেখলে আমারও বুক ধড়ফড় করে। কিন্তু একটা রােগা নেড়ি কুত্তা খুব কাছে এলে ওকে তাে একটা লাথি মেরেও হটিয়ে দিতে আমি বললাম, এই যা, যাঃ।

কুকুরটা খুব আস্তে ঘেউ করে উঠল। সেটা ঠিক রাগের ডাক নয়, যেন ভয়ে ভয়ে কোন অনুরােধ জানাচ্ছে।

ছােটমামা বললেন, দেখলি! রাস্তা ছেড়ে যাবে না।

আমি বললাম, ও এদিকেই আসতে চায়।

আকাশে কালাে মেঘ। রাস্তার দু'পাশের ধান ক্ষেতে খুব গাঢ় সবুজ রঙের কচি কচি ধান। মেঘের ছায়ায় ধানের সেই সবুজ রঙও পাল্টে গেছে। যে- কোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে, আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার।
ছােটমামার কাছে ছাতা আছে, কিন্তু এই রকম ফাকা জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু
হলে ছাতায় কোন কাজ হয় না।

কুকুরটা আস্তে আস্তে কয়েক পা এগিয়ে এল আমাদের দিকে। খুব সম্ভবত সে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইছিল, কিন্তু ওকে এগােতে দেখেই ছােটমামা রাস্তায় বাঁ-দিকের ঢালু জায়গাটা দিয়ে দৌড়ে খানিকটা নিচে নেমে গেলেন।

কত ছােটখাটো ঘটনা থেকে বিরাট কাণ্ড হয়ে যায়। সেদিন ছােটমামা রাস্তাটার বাঁ-দিকে না নেমে যদি ডানদিকে নামতেন, তাহলে তার জীবনটা এরকম সাংঘাতিকভাবে বদলে যেত না। কিছুই হতাে না।

ছােটমামার সঙ্গে সঙ্গে আমিও নিচে নেমে এলাম। ভাবলাম কুকুরটা এবার পার হয়ে যাবে। কিন্তু কুকুরটাও নেমে এল বাঁ দিকের ঢালু ধার দিয়ে। খানিকটা দূরত্ব রেখে গররর গর-রর আওয়াজ করতে লাগল।

ছােটমামা বললেন, বলেছিলাম না পাগলা কুকুর। খবরদার, দৌড়বার চেষ্টা করিস না।

আমার তখনও কুকুরটা পাগলা বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ কুকুরটার মুখ চোখে রাগের ভাব নেই। গলা দিয়ে আওয়াজ করছে বটে, কিন্তু সেটাও বেশ নরমভাবে।

আমরা দু’জনে কুকুরটার মুখখামুখি দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাদের পেছন দিকে একটা ঝােপ। সামনে খানিকদূরে একটা নােংরা জলের ডােবা। কাছাকাছি কোন বাড়ী ঘর বা মানুষজন নেই।

কুকুরটা সেইরকম আওয়াজ করতে করতে এক পা এক পা করে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসতে লাগল। ছােটমামা ছাতাটা বাগিয়ে ধরলেন। আমি ‘হুস-হাস, যাঃ' বলতে লাগলাম।

খুব ভীতু লােকেরাও একসময় খুব সাহসী হয়ে ওঠে। কুকুরটা আর একটু কাছাকাছি আসতেই ছােটমামা নিজে দু’পা এগিয়ে ছাতাটা দিয়ে ওর পিঠে খুব জোরে এক ঘা কষালেন।

কুকুরটা প্রচণ্ড আর্তনাদ করে উঠল। কিন্তু উল্টে আমাদের আক্রমণ না করে সে পেছন ফিরে প্রাণপণে দৌড় মারল।

ছােটমামা বীরের মতন বললেন, দেখলি, ব্যাটাকে দিয়েছি ঠান্ডা করে। কিন্তু ততক্ষণে আর একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে গেছে। কুকুরটা খুব জোরে পালাতে গিয়ে হুড়মুড় করে পড়ল সেই ডোবাটার মধ্যে। জলের মধ্যে দাপাদাপি করল একটুক্ষণ, তারপর হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেল আবার। কুকুরটা ঘাড় কাত করে ভাসছে, তার চোখ দুটো দেখলে মনে হয়, মরে গেছে।

আমরা হতবাক। কুকুর কখনাে জলে ডােবে না, জন্তু-জানােয়ারই জন্ম থেকে সাঁতারু। তাহলে কুকুরটা মরে গেল কেন? তাহলে কি ছােটমামার ছাতার ঘা থেয়েই মরে গেল? কিন্তু সব নেড়ি কুত্তাই তাে খুব মারধাের খায়,
এক ঘা ছাতার বাড়ি খেয়ে তার তাে কিছু হবার কথা নয়।

আমরা ভােবাটার কাছে এগিয়ে গিয়ে ভাল করে দেখলাম। কুকুরটা যে মরে গেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ছােটমামা আর আমি চোখাচোখি করলাম কয়েকবার, কিছুই বুঝতে পারলাম না আমরা। ছােটমামার নরম মন, তার মুখখানা কাদো কাঁদো হয়ে গেছে। তিনি কুকুরটাকে মেরে ফেলতে চান নি মােটেই।

এমন হতে পারে যে কুকুরটা খুব বুড়াে হয়ে গিয়েছিল। ও যে কোন সময় মরতে পারত। ছাতার ঘা খেয়ে ভয় পেয়ে জলের মধ্যে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট ফেল করেছে।

এই সময় কুঁই কুঁই শব্দ পেয়ে আমরা আবার চমকে পেছন ফিরে তাকালাম। ঝােপটার আড়াল থেকে তুরতুরে পায়ে বেরিয়ে আসছে তিন-চারটে কুকুরছানা। তখন সব ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। ঐ কুকুরটা আমাদের তাড়া করে আসেনি। ও ওর বাচ্চাদের কাছে আসতে চাইছিল।আমরাই বা সেটা বুঝব কী করে? সব কুকুরকেই আমরা কুকুর বলি, কিন্তু ওটা ছিল কুকুরী। ছানাগুলাে ঘুমােচ্ছিল বােধহয়, আওয়াজ শুনে জেগে উঠেছে।

আমাদের খুব মন খারাপ হয়ে গেল! মা মরে গেল, এখন বাচ্চাগুলাের কী হবে? আমরাই বা এখন কী করব? নবাব বাড়ীতে যাচ্ছি, সেখানে তাে আর কয়েকটা নেড়ি কুত্তার বাচ্চা কোলে করে নিয়ে যাওয়া যায় না।

এমন সময় টপাটপ ফোটার বৃষ্টি নামল। বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে বাজ ডাকল একবার। ছােটমামা বললেন, এবার চল, ওরা ঠিক বেঁচে যাবে। একমত হয়ে আমিও উঠে এলাম রাস্তার ওপর। মনে হল যেন মরা কুকুরীটা তখনও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

খানিকটা যেতে না যেতেই শুরু হলাে ঝড়। আকাশের এদিক থেকে ওদিক চিরে যেতে লাগলাে বিদ্যুতে। আর কী অসম্ভব জোরে বজ্রের আওয়াজ। ফাঁকা মাঠের মধ্যে এই আওয়াজ যে কত সাংঘাতিক তা সেদিনই
বুঝেছিলাম। মনে হয় যেন একটা বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেছে।

হাঁটবার বদলে আমরা প্রায় দৌড়ােতে শুরু করেছি। রাস্তার ধারে একটা খেজুরগাছ দেখে ছােটমামা বললেন, আয়, এখানে একটু দাঁড়াই।

আমি বললাম, না, এখনাে জোরে বৃষ্টি নামে নি। চল, সামনে কোন গ্রাম-টাম পাওয়া যাবে।

সঙ্গে সঙ্গে বিরাট জোরে একটা বাজ পড়ল। আমি চোখ বুজে কান ঢেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। একটু পরে চোখ মেলে দেখি, ছােটমামা খেজুর গাছটার কাছেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। আর গাছটার রং হয়ে গেছে কালাে।

আমার বুকের মধ্যেও যেন একটা বাজ ডেকে উঠল। বজ্রপাতে মানুষ মরে যাবার কথা শুনেছি। তবে কী তাই হলাে? ছুটে গেলাম ছােটমামার কাছে। পিঠে হাত রেখে বললাম, ছােটমামা!

ছােটমামা চোখ মেলে বললেন, কী ?

আমি একটা মস্ত নিঃশ্বাস ফেললাম। আমার মাথায় যেন ঠাণ্ডা বাতাস লাগল। এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।

ছােটমামা, তােমার কিছু হয়নি তাে?

তাে! আমি রাস্তায় শুয়ে আছি কেন?

পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলে বােধহয়। উঠতে পারবে?

হ্যাঁ, কেন পারব না?

ছােটমামা নিজে উঠে দাঁড়ালেন। ছাতাটা ছিটকে একপাশে পড়ে গিয়েছিল, সেটাকে তুলে নিলাম। আমার জন্য অপেক্ষা না করেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করলেন ছােটমামা। আমি এগিয়ে গিয়ে দু'একটা কথা বলার চেষ্টা করলাম, ছােটমামা কোন উত্তর দিলেন না। মুখখানা অসম্ভব গম্ভীর।

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় আমি চমকে উঠলাম। ছােটমামার চোখে চশমা নেই। অথচ চশমা ছাড়া উনি ভাল দেখতে পান না। হাঁটতে পর্যন্ত অসুবিধে হয়।

ছােটমামা, তােমার চশমা ?

ভুরু কুঁচকে ছােটমামা বলেন, চশমা! আমার চশমা ছিল তাই না! সেটা কোথায় গেল?

আমি দেখছি।

দৌড়ে ফিরে গেলাম খেজুরগাছটার কাছে। একটু খুঁজতেই চশমাটা পাওয়া গেল। ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলাম, ছােটমামা, তােমার সত্যি কিছু হয় নি ? শরীর ঠিক আছে তাে ?

কোন উত্তর না দিয়ে আমার কাছ থেকে চশমাটা নিয়ে ছােটমামা আবার হাঁটতে শুরু করলেন।

যে রকম মেঘ ডাকছিল, সেই তুলনায় জোর বৃষ্টি হল না। আমরা সন্ধ্যের একটু আগেই পৌছে গেলাম নবাব বাড়ীতে।

সে বাড়ী দেখলে কান্না পায়। একসময় নিশ্চয়ই দারুণ ব্যাপার ছিল, এখন অনেকখানি জায়গা জুড়ে পড়ে আছে একটা ভগ্নস্তুপ। সিংহদ্বারের একটা সিংহ এখনাে টিকে আছে, অন্যদিকে কিছুই নেই। কোথাও দাঁড়িয়ে আছে শুধু একখানা দেয়াল, কোথাও একখানা দুখানা ঘর আস্ত আছে, কিন্তু দরজা জানলা নেই। মনে হয়, সাত মহলা না হলেও তিন চার মহলা প্রাসাদ ছিল।
এখন এই ভাঙাচুরা বাড়ীর মধ্যেও কিন্তু অনেক লােক আছে। জোড়াতালি
দিয়ে থাকে, কেউ এ বাড়ী সারাবার কথা চিন্তা করে না।

একটু খোঁজ করতেই নবাবকে পাওয়া গেল। বর্তমান নবাবের বয়েস খুব কম। বাইশ তেইশ বছর মাত্র, নবাবী-চাল কিছু নেই। প্যান্ট-শার্ট পরা সাধারণ কলেজের ছাত্রদের মতন মনে হয়। বেশ হাসি-খুশি। ছােটমামার কাছে হাইকোর্টের জৰ্জ ইউসুফ সাহেবের একটা চিঠি ছিল। সেটা দেখে তরুণ নবাব বললেন, বইপত্র সব প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, উইপােকায় শেষ করে দিয়েছে। আপনারা দেখে ইচ্ছে মতন যে কটা খুশি নিতে পারেন। আমি
শিগগির পাকাপাকিভাবে বিলেত চলে যাচ্ছি, তাই যা আছে সব বিলিয়ে দিয়ে যেতে চাই।

গােটা একটা বাড়ীতে নাকি ছিল লাইব্রেরী। আশ্চর্যের ব্যাপার, সে বাড়িটা কিন্তু এখনাে পুরােপুরি ভেঙে যায় নি। দু'তিনখানা ঘর এখন প্রায় আস্তই আছে। একটা ঘরে ঢুকে দেখলাম, বইপত্রে একেবারে পাহাড় হয়ে আছে। খুব সম্ভবত আগে এ ঘরে বড় বড় আলমারি বা কাঠের রাক ছিল। কেউ
একজন তার থেকে সব বইগুলাে বার করে মেঝেতে ফেলে সেই আলমারি আর রাক বিক্রি করে দিয়েছে। অধিকাংশ বই-ই ছিড়ে কুটিকুটি।

ছােটমামা আন্দাজে ভুল করেন নি। জানােয়ারের বইও বেরুল দু’একখানা। অতিকষ্টে গােটা চারেক বই আমরা বেছে নিতে পারলাম। বাকি আবার কাল সকালে দেখব বলে বেরিয়ে এলাম। ধুলাে আর ভ্যাপসা গন্ধে ভরা ঘরের মধ্যে বেশীক্ষণ থাকলে দম আটকে আসে।

অবস্থা খারাপ হয়ে গেলেও নবাব বাড়ীর আতিথ্য এখনাে বেশ উঁচুদরের। ছােটমামার জামা কাপড়ে কাদা লেগে গিয়েছিল বলে ওঁকে দেওয়া হল একটা সিল্কের লুঙ্গি আর একটা ভাজ ভাঙা পাঞ্জাবী। রাত্রে খাওয়া-দাওয়া জমলাে বেশ, তিনরকম কাবাব আর ঘি চপচপে পরােটা। থাকার জন্য একটা ঘরও পাওয়া গেল। সেখানটায় একতলার সব ঘর আবর্জনায় ভর্তি, কিন্তু সিঁড়ি আর
দোতলার একটা ঘর অটুট আছে। সেখানে পাশাপাশি দু'খানা খাটে পরিষ্কার চাদর পাতা। নবাব নিজে এসে আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে গেলেন। আমাদের খুবই অসুবিধে হবে বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন বারবার। আমরা খুব ‘না’ ‘না’ বলতে লাগলাম। আমি একাই কথা বললাম অবশ্য, ছােটমামাও সেই বিকেলের পর থেকে কথা বলছেন খুব কম।

ইলেকট্রিসিটি নেই, একটা হ্যারিকেন রাখা হয়েছে আমাদের ঘরে। ছােটমামা সেই টিমটিমে আলােতেই একটা বই খুলে বসেছেন। কিছুক্ষণ বই না পড়ে ছােটমামা ঘুমােবেন না আমি জানি। কিন্তু আমার ঘুম পেয়ে গেছে।

আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে, আর সারা রাত বৃষ্টি পড়লেও কোন ক্ষতি নেই, ঘুমটা জমবে ভালাে। অবশ্য বেশী বৃষ্টি হলে এই বাড়ীটা না ধ্বসে পড়ে।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ একটা বিশ্রী শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কেউ যেন একটা মাটির হাঁড়ির মধ্যে মুখ দিয়ে আওয়াজ করছে। এত রাত্রে এ রকম ইয়ার্কি কে করে? পাশ ফিরে দেখলাম নিজের খাটের ওপর সােজা হয়ে বসে ছাটমামা এক মনে বই পড়ছেন।

ছােটমামা, কোনাে আওয়াজ শুনেছাে? ছােটমামা শুধু আমার দিকে একবার তাকালেন। কোন উত্তর দিলেন না। পড়ার সময় ডিসটার্ব করা পছন্দ করেন না ছােটমামা। আমি ভাবলাম, তাহলে ঘুমের মধ্যে নিশ্চয়ই আমি ভুল শুনেছি। পাতলা ঘুমের মধ্যে এরকম অনেক অদ্ভুত আওয়াজ শােনা যায়।

আবার চোখ বুজলাম। কিন্তু কিসের যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি। খুব খারাপ গন্ধটা। অথচ একটা চেনা-চেনা। যাই হােক, ঘুমােবার চেষ্টা করলাম জোর করে। গন্ধটা যেন বেড়েই যেতে লাগল। এবার চিনতে পারলাম। ছােটমামার সঙ্গেই চিড়িয়াখানায় গেছি কয়েকবার, সেখানে বাঘ-সিংহের খাঁচার সামনে এরকম গন্ধ পাওয়া যায়। সেই রকমই বোটকা গন্ধ। তখন মনে হল, একটু
আগে যে আওয়াজটা শুনেছিলাম, সেটাও যেন বাঘের ডাকের মতন।

তক্ষুনি আবার সেই রকম বাঘের ডাক শােনা গেল। একেবারে ঘরের মধ্যে। ধড়মড় করে উঠে বসে দেখলাম, সামনে খােলা বইখানির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছােটমামা আওয়াজ করছেন উমা! উমমা! অবিকল
বাঘের মতন। ঘরটাতে অসম্ভব বোঁটকা গন্ধ।

ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলেও আমি ডাকলাম ছােটমামা।

ছােটমামা ডাক থামিয়ে আমার দিকে তাকালেন। একদম অন্যরকম মুখ।
অসম্ভব হিংস্র। গলা দিয়ে গ-র-র-র আওয়াজ বেরুচ্ছে।

ছােটমামার বদলে অন্য কোন লােক হলে আমি কী করতাম জানি না। কিন্তু ইনি তাে আমার নিজের ছােটমামা। খাট থেকে লাফিয়ে উঠে ছােটমামাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, ছােটমামা! ছােটমামা! কী হয়েছে ? তােমার কী হয়েছে ?

তাকিয়ে দেখলাম, ছােটমামার সামনের খােলা বইটাতে একটা বাঘের ছবি।

কিছু না ভেবেই আমি বইটা বন্ধ করে দিলাম।

ছােটমামা অমনি সাধারণ গলায় বললেন, কিছু হয়নি তাে! তুই অমন করছিস কেন?

তুমি ওরকম শব্দ করছিলে কেন? ঘরে কিসের গন্ধ?

কই, কিছু না তাে! আমি তাে গন্ধ পাচ্ছি না।

আমি ভয়ে ভয়ে খাটের তলা দেখলাম। কিন্তু দোতলার ওপর খাটের নিচে তাে বাঘ লুকিয়ে থাকতে পারে না! তাছাড়া আওয়াজটা ছােটমামাকেই করতে শুনেছি। ছােটমামা আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছেন? না মাথা খারাপ হয়ে গেছে?

ছােটমামা হাই তুলে বললেন, আমিও এবার শুয়ে পড়ব।

হ্যারিকেনটা কমিয়ে রাখা হল খাটের পাশে। ছােটমামা একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, হারে নীলু, কুকুরটাকে কি আমিই মেরে ফেললাম?

বললাম, না, এত সহজে কি কুকুর মরে?

হয়তাে আমার ছাতার ঘায়ে ওর শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল। তাই জলে পড়ে গিয়ে...

আমার তা মনে হয় না। ওর নিশ্চয়ই মরবার সময় হয়ে গিয়েছিল।

হঠাৎ গলার আওয়াজটা বদলে ফেলে ছােটমামা হুংকার দিয়ে বললেন,

বেশ করেছি মেরেছি। একটা পাগলা কুকুর তেড়ে এলে মারবাে না?

আমার ছােটমামা বরাবরই শান্ত স্বভাবের মানুষ। কোন দিন এরকম দাঁত মুখ খিচিয়ে কথা বলেন না। কিন্তু এসবের চেয়েও আমি বাঘের ডাকটার কথা বেশী চিন্তা করছিলাম। ছােটমামা এরকম বাঘের মতন ডাকতে পারেন? কোনদিন শুনিনি আগে। ছােটমামা আমায় ভয় দেখাতে চাইছিলেন? তাহলে
বাঘের গায়ের বোঁটকা গন্ধটা আমি পেলাম কী করে? ওটাও কি আমি মনে মনে কল্পনা করেছি? গন্ধটা এখনাে ঘর থেকে যায়নি পুরােপুরি।

রাতে আর কিছু হল না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ছােটমামা বললেন, চল, আমরা এখান থেকে চলে যাই।

আমি বাঘের প্রসঙ্গটা একটু তুলতে যেতেই ছােটমামা বললেন, তাের কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছিস! এই মুর্শিদাবাদে বাঘ? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ!

একটু বেলা হতেই তরুণ নবাব এলেন আমাদের খোঁজ খবর নিতে। চা খাবার পর বললেন, চলুন, বই দেখতে যাবেন না?

ছােটমামার কোন উৎসাহ দেখলাম না। বইয়ের ঘরে ঢুকেও ছােটমামা চুপ করে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন, একটা বইও ছুঁয়ে দেখলেন না। যে ছাটমামা বইয়ের পােকা, যার জন্য এতদূরে আসা। আস্ত দেখে পঁচিশ-
তারিশখানা বই বেছে নিয়ে বললাম, ব্যাস, যথেষ্ট হয়েছে। কয়েকটা বান্ডিলে বেধে নিলাম বইগুলাে।

ফেরার পথে আমরা এলাম গরুর গাড়িতে। নবাবকে প্রচুর ধন্যবাদ দিয়ে আমরা উঠে পড়লাম সেটাতে। বিদায় নেবার সময় ছােটমামা একটাও কথা
বললেন না। আমার খুব লজ্জা করছিল।

আগের দিন যেখানে সেই ঘটনাটা ঘটেছিল, সে জায়গাটা মনে ছিল আমার। রাস্তার ওপর থেকেই নিচের সেই ডােবাটা দেখা যায়। মরা কুকুরটা এখনাে জলে ভাসছে। বাচ্চাগুলােকে কোথাও দেখতে পেলাম না। আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম, ছােটমামা চোখ বন্ধ করে আছেন, আর বিড় বিড়
করে কী যেন বলছেন। ছােটমামার ব্যবহার দেখে আমি রীতিমতন চিন্তায় পড়ে গেছি। কলকাতায় ফিরেই ডাক্তার দেখাতে হবে। সামান্য একটা কুরকে মারা নিয়ে কী যেন হয়ে গেল। তাও তো ইচ্ছে করে মারা হয়নি।
কিংবা ঐ যে বাজের আওয়াজে ছােটমামার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, সেই জন্যই এসব হচ্ছে। কিন্তু কুকুরটার জন্য এখানে দেরি না হলে বাজ পড়বার আগেই অনেকটা চলে যেতাম।

স্টেশনে এসে মিনিট পনেরাের মধ্যে আমরা পেয়ে গেলাম একটা ট্রেন। উঠে পড়লাম টিকিট কেটে। আমাদের কামরায় খুব বেশী ভিড় নেই। একটাই মাত্র জানলার ধারে সীট ছিল, সেটা ছােটমামাকে দিয়ে আমি বসলাম পাশে। ছােটমামা আবার চোখ বুজে বিড়বিড় করতে লাগলেন।

আধঘন্টাখানেক বাদে ছােটমামা আবার চোখ মেলে গা ঝাড়া দিয়ে সােজা হয়ে বসলেন। খুব স্বাভাবিক গলায় বললেন, অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে। দে তাে একটা বই পড়ি।

আমি খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি একটা বইয়ের বান্ডিল খুলতে গেলাম। ছােটমামা অন্য একটা বান্ডিলের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, ওর থেকে তিন নম্বর বইটা দে।

একটা চওড়া মতন বই, জার্মান ভাষায় লেখা, ভেতরে অনেক জন্তু-জানােয়ারের ছবি। বইটা ছােটমামার দিকে এগিয়ে দিলাম।

ছােটমামা বইখানা মাঝখানের একটা পাতা উল্টেই চোখ বিস্ফারিত করে ফেললেন। একটা অদ্ভুত চীৎকার করে বইটা ছুঁড়ে দিলেন কামরার মেঝেতে।

কামরার সবাই আমাদের দিকে তাকাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হল ছােটমামা?

ছােটমামা কুকুরের মতন ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলেন। নকল কুকুরের ডাক নয়। ঠিক যেন একটা আসল কুকুর ডাকছে।

বহু লােক ভিড় করে এল আমাদের দিকে। ছােটমামা তখনও ডেকে চলেছেন। কেউ কেউ ব্যাপারটাকে ঠাট্টা মনে করে হাসতে লাগল। আমার যেন লজ্জায় মাথা কাটা গেল। আমি ঝুঁকে ছােটমামার হাত ধরে বললাম, কী হয়েছে ছােটমামা, এরকম করছ কেন?

ছােটমামা খ্যাক করে আমার হাত কামড়ে ধরলেন দারুণ জোরে। অন্য লােকেরা এসে তাড়াতাড়ি না ছাড়িয়ে দিলে ছােটমামা বােধহয় আমার হাতের মাংসই তুলে নিতেন। আমাকে ছাড়বার পরই ছােটমামা অন্যদের কামড়াতে গেলেন, তখন সবাই ছােটমামাকে দমাদম করে মারতে শুরু করল।

এ রকম অবস্থায় আমি জীবনে কখনাে পড়িনি। আমার কান্না পেয়ে গেল। আমার ছােটমামাকে অন্য লােকে মারছে। আমি ঝাপিয়ে পড়ে ছােটমামাকে আড়াল করে কাতর গলায় বললাম, ছেড়ে দিন, দয়া করে ছেড়ে দিন।

ছােটমামা তখনই আবার স্বাভাবিক গলায় বললেন, কী হয়েছে রে নীলু ! লােকগুলাে এমন ক্ষেপে গেল কেন?

একজন লােক মাটিতে ওল্টানাে বইটা তুলে এনে দিল আমার হাতে। খােলা পাতাটায় একটা কুকুরের ছবি।

অনেক লােক তখনাে বলতে লাগল, নামিয়ে দিন, লােকটাকে নামিয়ে দিন। আমি হাত জোড় করে সকলের কাছে ক্ষমা চাইলাম। ছােটমামা বারবার অসহায়ভাবে বলতে লাগলেন, লােকগুলাে এত রাগ করছে কেন? কী হয়েছে?

আমার হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছিল। আমি সেখানে একটা রুমাল চাপা দিয়ে বললাম, কিছু হয়নি। তুমি চোখ বুজে থাক।

আমাদের কাছাকাছি আর কোন লোক বসল না।

হাওড়া স্টেশনে পৌছলাম ভালভাবেই। ট্রেনের দু’জন সহযাত্রী আমার পতি দয়া করে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিলেন। বেশ শান্তভাবেই ট্যাক্সিতে উঠলেন ছােটমামা। এমনকি লােক দুটিকে নমস্কার করে ধন্যবাদ জানালেন। ট্যাক্সি চলতে শুরু করার পর আমাকে বললেন, বেশ ভাল লােক তাে ওরা।
এবার বেড়ানােটা তেমন ভাল হল না, সকাল থেকে মাথাটা ঝিমঝিম করছিল কেমন যেন।

আমি বললাম, রাত্তিরে ভাল ঘুম হয়নি বােধহয়। বাড়ী গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

তুই ভাল বই এনেছিস তাে? আমার আর কিছু দেখা হল না।

হ্যা, ভাল বই আছে কয়েকটা।

দেখি, দে তাে।

আমি সঙ্গে সঙ্গে বইগুলাে আড়াল করে বললাম, না, এখন নয়, বাড়ীতে গিয়ে দেখবে!

ছােটমামা আর জোর করলেন না। বললেন, সত্যি রে, আমার বড় ঘুম পাচ্ছে।

আমরা তখন থাকি মােমিনপুরের কাছে। ট্যাক্সিটা চলছে খুব আস্তে আস্তে। হঠাৎ পাশেই একটা ডুমডুম আওয়াজ পেলাম। ছােটমামা চোখ বুজে ছিলেন। অমনি আবার চোখ মেলে খাড়া হয়ে বসলেন। আমি দেখলাম, আমাদের ট্যাক্সির পাশ দিয়ে একজন বাঁদর নাচওয়ালা চলেছে দুটো বাঁদর নিয়ে ।

ছােটমামা মুখ দিয়ে দু’বার হুপহুপ করে ঝট্‌ করে ট্যাক্সির দরজা খুলে নমে গেলেন রাস্তায়। তারপর লাফাতে লাগলেন, সেই বাঁদর দুটোর পাশে। আর অবিকল একটা গােদা বাঁদরের মতন দাঁত মুখ খিচোতে লাগলেন বাদরওয়ালার দিকে।

একটা দারুণ হৈ-চৈ পড়ে গেল। কলকাতার রাস্তায় ভিড় জমতে এক মিনিট দেরি হয় না। তা ছাড়া এমন দৃশ্য, একজন ধুতি পাঞ্জাবী পরা লােক বাদরের মতন শব্দ করছে আর লাফাচ্ছে।

ছােটমামাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ঠিকই। তারপর তার চিকিৎসা করা হয়েছে। কোন ডাক্তার তার মধ্যে পাগলামির কোন চিহ্ন খুঁজে পান নি। কিন্তু তার পাগলামি দিন দিনই বাড়তে লাগল। এমনিতে ছােটমামা খুব চমৎকার স্বাভাবিক মানুষ। কিন্তু কোন জন্তু-জানােয়ার দেখলে কিংবা বইতে কোন জন্তু-জানােয়য়ারের ছবি, এমনকি নামটা দেখলেও তিনি বদলে যান। অমনি সেই জন্তুটির লক্ষণ তার মধ্যে ফুটে ওঠে। কোন ওষুধে কোন কাজ হল না।

শেষ পর্যন্ত ছছাটমামাকে রাখা হল মধুপুরের একটা ফাকা বাড়ীতে। সে বাড়ীতে কোন ছাগল বা বেড়ালও ঢুকতে দেওয়া হয় না। ছােটমামা সর্বক্ষণ অঙ্ক বা জ্যামিতির বই পড়েন। গল্পের বই পড়া একেবারে বন্ধ। কারণ আমি দেখেছি, বাংলা বা ইংরেজীতে এমন কোন গল্পের বই নেই, যেখানে একবার
একবার কোন না কোন জন্তু-জানােয়ারের উল্লেখ থাকে না। একবার একটা বইতে শুধু ‘বিড়ালের মতন সতর্ক’ এই লাইনটা পড়েই ছছাটমামা বেড়াল ডাক ডাকতে শুরু করেছিলেন।

আমার মনে হয়, পশুসমাজের কোন আলাদা ব্যবস্থা আছে। তারাই কে রহস্যময় উপায়ে ছােটমামার ওপর এরকম প্রতিশােধ নিয়েছে। যদিও জানি, আমার এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। অবশ্য মধুপুরে গিয়ে যে কেউ আমার ছােটমামাকে এখনাে দেখে আসতে পারে।

আর একটা কথাও আমার প্রায়ই মনে হয়। সেদিন কেন সেই মাটির রাস্তাটার বাঁদিকে না নেমে ডান দিকে নামলাম না আমরা। তাহলেই তাে সব ঠিকঠাক থাকত।
            

 

পিডিএফ ডাউনলোড করুন


(সমাপ্ত)


              গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন ।

                

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে দয়া করে জানাবেন ।